লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি
আমার নিরপরাধ ছেলেকে হত্যা করেছে কাজী বাবলু। তার কি দোষ ছিল, কেন তাকে হত্যা করা হলো? সে তো কারো ক্ষতি করে নাই।’ কান্নাজড়িত কন্ঠে কথাগুলো বললেন লক্ষ্মীপুরের চন্দ্রগঞ্জে সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত এম সজিবের মা বুলি বেগম। 
ছেলে হত্যার বিচারের দাবি ও হত্যাকাণ্ডে অভিযুক্ত প্রধান আসামি কাজী মামুনুর রশিদ বাবলুকে গ্রেপ্তারের দাবিতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন সজিবের মা। 

কাজী বাবলু চন্দ্রগঞ্জ থানা স্বেচ্ছাসেবক লীগের আহ্বায়ক। নিহত সজিব চন্দ্রগঞ্জ কফিল উদ্দিন বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি প্রার্থী ছিলেন। তিনি চন্দ্রগঞ্জের পাঁচপাড়া গ্রামের মৃত সিরাজ মিয়ার ছেলে। 
শুক্রবার (২৬ এপ্রিল) বেলা ১১ টার দিকে চন্দ্রগঞ্জ প্রেসক্লাবে এ আয়োজন করা হয়। 

নিহত সজিবের মা বুলি বেগম বলেন, আমার ছেলেকে কাজী বাবলু হত্যা করেছে। তাকে গ্রেপ্তার করে বিচারের মুখোমুখি করা হোক। আমি তার ফাঁসির দাবি জানাচ্ছি। পুলিশ পারেনা এমন কোন কাজ নেই, আপনারা দ্রুত ডাকাত বাবলুকে ধরে ফাঁসি দিন। এতে তার আত্মার শান্তি হবে। আমাদের আত্মাও শান্তি পাবে। 
একই দাবি জানিয়ে বক্তব্য দেন সজিবের বোন সাহিদা আক্তার শিল্পী। তিনিও ভাইয়ের হত্যার জন্য কাজী বাবলুকে দায়ি করে তার ফাঁসি দাবি করেন। 

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, চন্দ্রগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি এম. ছাবির আহম্মেদ, থানা কৃষকলীগের সভাপতি জাকির হোসেন জাহাঙ্গীর, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি গিয়াস উদ্দিন লিঠন, সাধারণ সম্পাদক কাজী সোলায়মান,সাংগঠনিক সম্পাদক খলিলুর রহমান, জেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি রিয়াজ হোসেন জয়, থানা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এম মাসুদুর রহমান, ইউনিয়ন যুবলীগের আহ্বায়ক সাহাব উদ্দিন, যুগ্ম আহ্বায়ক আব্দুর রাজ্জাক রিংকু, থানা শ্রমিকলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. জাহাঙ্গীর আলম, ইউপি সদস্য শাহ পরান শাকিলসহ সকল সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

চন্দ্রগঞ্জ থানা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এম. মাসুদুর রহমান বলেন, এম সজিব হত্যার সাথে জড়িত সবাইকে অনতিবিলম্বে গ্রেপ্তার করতে হবে এবং মূল আসামী ডাকাত বাবলুকে গ্রেপ্তার করে ফাঁসির আওতায় আনতে হবে। তার হাতে ছাত্রলীগের কোন নেতা নিরাপদ নয়। 

চন্দ্রগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ছাবির আহম্মেদ বলেন, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের পর থেকে ডাকাত বাবলু চন্দ্রগঞ্জ বাজার এলাকায় লাখ লাখ টাকা চাঁদাবাজি করেছে। সরকারী জায়গা দখল করে বিক্রি করে ও দখল বাণিজ্য করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়। অবৈধভাবে সে কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছে। এগুলোর বিরুদ্ধে সজিব প্রতিবাদ করায় বাবলু বাহিনী তাকে নৃশংসভাবে তাকে খুন করেছে। সে অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী। র‍্যাবের হাতে অস্ত্রসহ সে গ্রেপ্তার হয়েছে, সে মামলা চলমান রয়েছে। ডাকাতি করার সময় সে গ্রেপ্তার হয়েছে। আমি এ ডাকাত বাবলুকে দ্রুত গ্রেপ্তার করে ফাঁসি দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।

গত ১২ এপ্রিল (শুক্রবার) রাতে চন্দ্রগঞ্জ থানাধীন পাঁচপাড়া গ্রামের যৈদের পুকুরপাড় এলাকায় ছাত্রলীগ নেতা সজিব, সাইফুল পাটোয়ারী, মো. রাফি ও সাইফুল ইসলাম জয়ের ওপর অতর্কিত হামলা চালায় দুর্বৃত্তরা। ১৬ এপ্রিল দিবাগত রাতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সজিবের মৃত্যু হয়। 
এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা কাজী মামুনুর রশিদ বাবলু ও তার বাহিনীর সদস্যরা সজিবকে হত্যা করেছে বলে অভিযোগ পরিবার ও দলীয় নেতাকর্মীদের। 
হামলার ঘটনায় গত ১৫ এপ্রিল সজিবের মা বুলি বেগম বাদি হয়ে চন্দ্রগঞ্জ থানা স্বেচ্ছাসেবক লীগের আহবায়ক কাজী মামুনুর রশিদ বাবলু ও সদস্য সচিব তাজুল ইসলাম তাজু ভূঁইয়াসহ ১১ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা দায়ের করেছে। এতে ২০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়। এ ঘটনার অভিযুক্ত তাজু ভূঁইয়া, ফারুক হোসেন, রেজাউল করিম বাবু ও ইব্রাহিমসহ ৫ জনকে বিভিন্ন সময় গ্রেপ্তার করেছে চন্দ্রগঞ্জ থানা পুলিশ। তারা কারাগারে রয়েছেন।