লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি : লক্ষ্মীপুরে একজন প্রসুতি রোগীর অপারেশনের পর তার মৃত্যু হয়েছে। শনিবার (৪ ডিসেম্বর) বিকেল ৩ টার দিকে লক্ষ্মীপুর নিউ আধুনিক হাসপাতাল (প্রাঃ) নামের একটি বেসরকারি হাসপাতালে শিমু আক্তার (৩০) নামে ওই প্রসুতির অপারেশনের দায়িত্বে ছিলেন জেলা সিভিল সার্জন ডাঃ আবদুল গাফফার। যিনি জেলার স্বাস্থ্য বিভাগের সর্বোচ্চ কর্মকর্তা। তার বিরুদ্ধে চিকিৎসার অবহেলার অভিযোগ তুলেছেন প্রসুতির স্বজনেরা।
বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে শিমুর পরিবারের লোকজন তার মৃত্যুর বিষয়টি জানতে পারে। এ ঘটনার পর তার আত্মীয়-স্বজনেরা রাতে ওই হাসপাতালে হামলার চেষ্টা চালায়। বিক্ষুব্ধ স্বজনরা ওই হাসপাতালের একটি গ্লাসও ভেঙে ফেলে। এতে হাসপাতালে পুলিশ সদস্যদের মোতায়েন করা হয়।
শিমু লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার শাকচর গ্রামের আলাউদ্দিনের মেয়ে। তার স্বামীর নাম লাভলু। সে একটি বাহিনীর সিভিল শাখায় কর্মরত আছে। সিহাব নামে শিমুর ১০ বছরের একটি পুত্র সন্তান রয়েছে।
ঘটনার সময় বিক্ষুব্ধদের ভয়ে হাসপাতালের লোকজন সটকে পড়ে। রাত সাড়ে ৯টা পর্যন্ত ওই হাসপাতালের দায়িত্বশীল কাউকে পাওয়া যায়নি। ফলে রোগীর স্বজনদের অবহেলার অভিযোগের বিষয়ে তাদের বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
দায়িত্বরত শহর পুলিশ ফাঁড়ির উপসহকারী পরিদর্শক (এএসআই) ওয়াদুদ বলেন, হাসপাতালে রোগীর স্বজনেরা ভীড় করেছে। তাদেরকে হাসপাতাল ছেড়ে চলে যেতে বলি। হাসাপাতালের বিরুদ্ধ কোন অভিযোগ থাকলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া পরামর্শ দিয়েছি।
মৃত শিমু আক্তারের মাতা জেসমিন আক্তার ও খালাতো বোন শিউলি আক্তার বলেন, শিমু আক্তারকে বিকেল পৌনে ৩ টার দিকে লক্ষ্মীপুরে পৌর শহরের নিউ আধুনিক হাসাপাতালে ভতি করা হয়। সেখানে তার সিজার অপারেশনের জন্য ১২ হাজার টাকা চুক্তি করা হয়। দুপুর তিনটার কিছুক্ষণ আগে জেলা সিভিল সার্জন শিমুর অপারেশন করান। তিনটার দিকে তাদের কোলে একটি কন্যা সন্তান দেন হাসপাতালের দায়িত্বরত নার্স। তবে শিশুটির মায়ের অবস্থার বিষয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে কোন সদুত্তর পাননি তারা। রোগী নিয়ে তারা নানা তালবাহানা শুরু করে। বিকেল ৫টার দিকে রোগীর অবস্থা খারাপ জানিয়ে রোগীকে তারা একটি এ্যাম্বুলেন্সযোগে ঢাকার উদ্দেশ্যে হাসপাতাল থেকে বের করে দেয়। পথিমধ্যে রামগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিলে শিমুকে মৃত ঘোষণা করে কর্তব্যরত চিকিৎসক।
তারা অভিযোগ করে বলেন, অপারেশন থিয়েটারে শিমুর মৃত্যু হয়েছে। শুরু থেকেই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ রোগীকে অবহেলা করেছে। তার পূর্ণ চিকিৎসা না দিয়ে সিভিল সার্জন অন্য আরেকজন প্রসুতির সিজারে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। এ ফাঁকে চিকিৎসার অভাবে তার মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু মৃত্যুর বিষয়টি তাদের বুঝতে না দিয়ে তড়িঘড়ি করে অন্যত্র পাঠিয়ে দেয়। এ ঘটনায় আমরা চিকিৎসক এবং হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিচার দাবি করেন স্বজনেরা।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে সিভিল সার্জন ডাঃ আবদুল গাফ্ফার মোবাইল ফোনে বলেন, ওই রোগী স্টোক করেছে। এখানে আইসিইউ সাপোর্ট না থাকায় রোগীকে ঢাকায় নিয়ে যেতে বলা হয়েছে। সেখানে নেওয়ার পথে হাসপাতালের বাহিরে রোগী মারা যান। সেক্ষেত্রে চিকিৎসার অবহেলার অভিযোগ সঠিক নয়।
এদিকে ডাঃ আবদুল গাফফারের বিরুদ্ধে মোটা অংকের চুক্তির বিনিময়ে প্রসুতিদের সিজার অপারেশন করার বিষয়টি বেশ পুরনো। তিনি জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে প্রসুতিদের সিজার অপারেশন করিয়ে থাকেন। বিভিন্ন সময়ে অপারেশন থিয়েটারের বেশকিছু ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ গণমাধ্যমে প্রকাশ হয়েছে। এতে নানা আলোচিত এবং সমালোচিত হয়েছেন তিনি। স্বাস্থ্য বিভাগের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা হয়ে কিভাবে প্রাইভেট হাসপাতাল ঘুরে ঘুরে সিজার আপারেশন করান, তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
তবে এ বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে সিভিল সার্জন আবদুল গাফফার বলেন, অফিস টাইমের বাহিরে প্রাইভেট হাসপাতালে সিজার অপারেশন করাতে কোন বাঁধা নেই।