লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি :
লক্ষ্মীপুরের চন্দ্রগঞ্জে যুবলীগ নেতা মামুনুর রশিদ হত্যা মামলায় পাঁচ আসামিকে মৃত্যুদণ্ড ও ১৪ আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।

বুধবার (২৬ জুলাই) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ দ্বিতীয় আদালতের বিচারক সৈয়দা আমিনা ফারহিন এ রায় দেন।

রায়ের সময় আদালতে দুই আসামি উপস্থিত ছিলেন। তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আদালত আরও দুই আসামীকে বেকসুর খালাস দিয়েছেন।

জেলা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) রায়ের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন, নোয়াখালী চাটখিল উপজেলার শ্রীপুর গ্রামের সাব মিয়ার ছেলে মো. মধু (৩৫) ও তার ভাই মো. শামীম (৪০), একই উপজেলার বারিয়াধর গ্রামের বারেক মাষ্টারের ছেলে মো. মামুন (৩৭), পূর্ব দেলিয়াই গ্রামের মৃত শাহজাহান চৌকিদারের ছেলে মো. বাবু ওরফে গলাকাটা বাবু এবং লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার চন্দ্রগঞ্জ ইউনিয়নের পশ্চিম লতিফপুর গ্রামের বশির উল্যার ছেলে কাউছার (২৭)।

যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন জাহাঙ্গীর আলম (৩০), নেহাল (৪৫), মো. বোরহান (৩৭), মো. তুহিন (৩৭), জাকির হোসেন (৪০), সোহরাব হোসেন (৪০), বাছির আহাম্মদ (৩৭), মো. মিজান (৫০), আলমগীর হোসেন (৪৫), কছির আহম্মেদ (২৫), কামরুল ইসলাম (৪০), আনোয়ার হোসেন (৩৩), তারেক আজিজ সুজন (৩৩), মো. টিপন ওরফে জাহাঙ্গীর আলম (২৯)। এরা লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার চন্দ্রগঞ্জ এবং নোয়াখালীর চাটখিল এলাকার বাসিন্দা। যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্তদের প্রত্যেকের ২০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও এক বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

খালাসপ্রাপ্তরা হলেন, গোলাম রাব্বানী ও সোহেল।

ভিকটিম মো. মামুনুর রশিদ খান লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার চন্দ্রগঞ্জ ইউনিয়ন যুবলীগের সহসভাপতি ছিলেন। তিনি ওই ইউনিয়নের আমানী লক্ষ্মীপুর গ্রামের আবু তৈয়ব খানের ছেলে। ২০১৫ সালের ১৮ মে রাতে মোটরসাইকেল যোগে বাড়ি ফেরার পথে সন্ত্রাসীদের গুলিতে তার মৃত্যু হয়।

মামলার এজাহার ও আদালত ও স্থানীয় সূত্র জানায়, রাজনৈতিক প্রতিহিংসার জেরে যুবলীগ নেতা মামুনের সাথে চন্দ্রগঞ্জের শীর্ষ সন্ত্রাসী সোলাইমান উদ্দিন জিসানের সাথে বিরোধ ছিল। জিসান বাহিনীর সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে পুলিশের অভিযানকে কেন্দ্র করে যুবলীগ নেতা মামুনকে দায়ী করা হয়। পরবর্তীতে জিসান র‍্যাবের সাথে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়। এ জন্যও মামুনকে দায়ী করে তার বাহিনীর সন্ত্রাসীরা।

তিনি বিদেশ থেকে দেশে এসে যুবলীগ নেতা মামুন ও তার সঙ্গী ওমর ফারুককে হত্যার পরিকল্পনা করে।

ঘটনার রাতে মামুন ও ওমর ফারুক মোটরসাইকেল যোগে বাড়ি যাবার পথে জিসান বাহিনীর সন্ত্রাসীরা তাদের লক্ষ্য করে এলোপাতাড়ি গুলি করে। এতে মামুনের মাথা, পেট ও বুকে গুলিবিদ্ধ হয়। ওমর ফারুক ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে রক্ষা পায়। গুলিবিদ্ধ মামুনকে স্থানীয়রা উদ্ধার করে চন্দ্রগঞ্জের একটি হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

এ ঘটনার পরদিন নিহতের বড় ভাই মো. ফকরুল ইসলাম বাদি হয়ে চন্দ্রগঞ্জ থানায় ১০ জনের নাম উল্লেখ এবং অজ্ঞাত ১৪/১৫ জনকে আসামী করে মামলা দায়ের করেন।

হত্যা মামলাটি তদন্ত করেন চন্দ্রগঞ্জ থানার সেই সময়ের উপপরিদর্শক (এসআই) মোহাম্মদ গোলাম হাক্কানী। তিনি ২০১৬ সালের ১০ সেপ্টেম্বর ২১ আসামীর বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন।

আদালত দীর্ঘ শুনানি এবং সাক্ষ্য প্রমানের ভিত্তিতে পাঁচ জনের ফাঁসি, ১৪ জনের যাবজ্জীবন ও দুই জনকে খালাসের রায় দিয়েছেন।

রায়ের সময় আদালতে ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত মধু ও যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রাপ্ত জাহাঙ্গীর টিপন উপস্থিত ছিলো।