বিজয়ের আলো নিউজ ডেস্ক:
লক্ষ্মীপুরের চন্দ্রগঞ্জ বিগত কয়েকমাস যাবত দিনদিনই অশান্ত ও অস্থিতিশীল হয়ে উঠছে। সরকার ও প্রশাসন বিরোধী একটি রাজনৈতিক চক্র নয়া মিশনের অংশ হিসেবে প্রতিনিয়ত শান্ত পরিবেশকে অশান্ত করতে বিভিন্ন অপতৎপরতায় লিপ্ত রয়েছে বলে জানা গেছে। বিভিন্ন মহলের অভিযোগ, এই চক্রটি একটি রাজনৈতিক দলের হয়ে এজেন্ডা বাস্তবায়নে সরকারের উন্নয়ন, বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদান ও সফলতা ধুলিসাৎ করতে উঠে পড়ে লেগেছে। এদের কারণে স্থানীয় আ.লীগের দলীয় ইমেজ এখন সংকটের মুখে পড়েছে। এছাড়া সরকারের আনুগত্যশীল প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধরনের কুৎসা রটিয়ে নানা রকম বিভ্রান্তির সৃষ্টি করে চলেছে চক্রটি। এরা প্রশাসনিক কার্যক্রমের গতিশীলতা নষ্ট করে এ সুযোগে নানা ধরনের ফন্দি ফিকির আঁটিয়ে নিজেদের সুবিধা আদায় করছে বলে জানা গেছে। ফলে চক্রটি তাদের নানা অপকর্ম জায়েজ করতে গিয়ে এলাকার সাধারণ ও নিরীহ জনগণকে বেকায়দায় ফেলার সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পাওয়া গেছে। স্থানীয় জনগণ মনে করছেন, বিগত ইউপি নির্বাচনে বিশ্বাস ঘাতকতার অভিযোগে দল থেকে বহিস্কৃত ও জনবিছিন্ন স্থানীয় চেয়ারম্যান নুরুল আমিন ক্ষিপ্ত ও প্রতিশোধ পরায়ন হয়ে থানা জুড়ে দল ও দলের বাইরের জামায়াত-বিএনপির শতাধিক অনুসারী ক্যাডারদের নিয়ে বাহিনী কিংবা জোট তৈরী করে দীর্ঘদিন যাবত এসব অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরী করে চলেছে।
বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার তথ্য সূত্রে জানা যায়, চাঁদাবাজিসহ হত্যা মামলায় যুক্ত স্থানীয় জামায়াত শিবিরের ঘনিষ্টজন হিসেবে পরিচিত রফিকুল ইসলাম, মোহাম্মদ হাসান ও কবির আহম্মদ ফারুকসহ কয়েকজনের বিশেষ পরিকল্পনায় চন্দ্রগঞ্জ বাজারের সাম্প্রতিক কালের বেশ কয়েকটি ঘটনায় এ চক্রটির নয়া মিশন নিয়ে উদ্ভিঘœ সাধারণ মানুষ, বাজারের ব্যবসায়ী, রাজনৈতিক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গসহ খোদ প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্তাব্যক্তিরা।
গোয়েন্দাদের বরাতে আরো জানা যায়, বিগত ইউপি নির্বাচনে দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে নুরুল আমিন আ.লীগের প্রার্থীর বিরুদ্ধে চন্দ্রগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করে। এর বিপরীতে বহিস্কার হয়ে ইউনিয়ন আ.লীগের দলীয় সভাপতির পদ হারান নুরুল আমিন। ওই সময় বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীদের সংঘবদ্ধ ও মাঠে নামিয়ে এবং আ.লীগের বিরুদ্ধে জোট তৈরী করে নুরুল আমিন চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। এর পরপরই বেপরোয়া হয়ে উঠেন নুরুল আমিন। এরপর নিজের গদি টিকিয়ে রাখতে আগের দলীয় বেশ কিছু অনুসারীসহ জামায়াত শিবিরের রফিকুল ইসলাম, মোহাম্মদ হাসান ও কবির আহম্মদ ফারুকসহ একটি নৈরাজ্যকর বাহিনীর প্রধান হিসেবে নিজেকে আবির্ভূত করেন নুরুল আমিন। একপর্যায়ে পরোক্ষভাবে ডোনার এবং আর্থিক সহযোগীতাসহ নিজের কয়েকজন অনুসারীদের দিয়ে চক্রটি তাদের মিশনের কাজ শুরু করে। আ.লীগের অভ্যন্তরীণ গ্রুপিংকে উস্কে দিয়ে ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও আ.লীগের দলীয় হামলা-মামলাসহ বিভিন্ন হানাহানির ঘটনায় মজা নিতে থাকে নুরুল আমিনের সাথে থাকা ভিন্ন রাজনৈতিক ফায়দা বাস্তবায়নে জামায়াত শিবির চক্রটি। এতেই ক্ষ্যান্ত হয়নি তারা। জামায়াত শিবিরের ওই চক্রটিকে সঙ্গে নিয়ে চেয়ারম্যান নুরুল আমিন চন্দ্রগঞ্জ বাজার ব্যবস্থাপনা নামে একটি কমিটি করেন। কিন্তু প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা থাকলেও থামাতে পারেনি এই কমিটির নামে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে নিয়মবহির্ভূত বেপরোয়া চাঁদাবাজি। এই কমিটির নামে বাজারের ফুটপাত ও পপুলার ক্রোকারিজের নামে জনৈক ব্যবসায়ীর মালিকানাধিন দোকানঘর দখল, মোটা অংকের বাণিজ্যসহ চাঁদাবাজির অভিযোগ রয়েছে। এসব ঘটনায় অতিষ্ট ও ক্ষুব্ধ হয়ে ব্যবসায়ীরা সম্প্রতি চন্দ্রগঞ্জ বাজার বণিক সমিতি গঠন করে নির্বাচনের আয়োজন করে। সেখানেও একই চক্র এর বিরোধিতা করে নিজেদের মনগড়া কমিটির নামে পাল্টা বণিক সমিতি তৈরী করে ব্যবসায়ীদের জিম্মীসহ তাদেরকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করে আসছে। এসব কারণে বিতর্কিতদের পাশ কাটিয়ে গত কয়েকমাস আগে থেকে চলা নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় চন্দ্রগঞ্জ উত্তর বাজারের ব্যবসায়ীদের কল্যাণে মাছ বাজারে বহুতল ভবনের সেড নির্মাণের উদ্যোগ নেয় উপজেলা প্রশাসন।
দেখা গেছে, ওই সেড নির্মাণের কাজ নিজেদের আয়ত্তে নিতে চক্রটি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ ইমরান হোসেনের বিরুদ্ধে ভুয়া ও বিভ্রান্তিরকর তথ্য উপস্থাপন করে প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের বেকায়দায় ফেলে ঠিকই কোটি টাকার কাজটি হাতিয়ে নিয়েছে তারা। একইভাবে ঘুর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত চন্দ্রগঞ্জ প্রেসক্লাবের সংস্কার কাজ করার সময় রফিক, হাসান, ফারুকসহ জামায়াত শিবির চক্রটির বিশেষ সুবিধার দাবী করলে প্রেসক্লাব কর্তৃপক্ষ অপরাগতা প্রকাশ করায় তা নিয়েও প্রশাসনের বিরুদ্ধে নানা বিভ্রান্তি ছড়ায়।
অপরদিকে ডেলিকেট গ্রুপের চেয়ারম্যান ও আওয়ামীলীগ নেতা দেলোয়ার হোসেনের খরিদকৃত বহুতল ভবনের ফ্ল্যাটে সন্ত্রাসী হামলা এবং কয়েকজনকে মারধরের ঘটনায় দায়েরকৃত মামলায় আবদুর রহমান আরজুকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। অথচ, এঘটনায় থানা পুলিশ চেয়ারম্যান নুরুল আমিনের নেতৃত্বাধীন জামায়াতি চক্রের অনৈতিক আবদারে রাজি না হওয়ায় পরবর্তীতে আটককৃতের সংবাদ সম্মেলনের নামে প্রশাসনকে বিভ্রান্তসহ অহেতুক ওসি তৌহিদুল ইসলামের প্রত্যাহারের দাবী জানায়।
অভিযোগ রয়েছে, চেয়ারম্যান নুরুল আমিনের নেতৃত্বে জামায়াত শিবিরের রফিক, হাসান ও কবির আহমদ ফারুকসহ চক্রটি চন্দ্রগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদকে তাদের নিরাপদ আস্তানা হিসেবে ব্যবহার করে আসছে। এমনকি স্থানীয় জামায়াত-বিএনপির নেতাদের শেল্টারে এখান থেকে তাদের মিশনের গোপন কার্যক্রমসহ পরিষদের টিআর-কাবিখা, এলজিএসপি, ইজিপিপির ননওয়েজ প্রকল্পের টাকা আত্মসাৎ, শালিস বাণিজ্য, চাঁদাবাজি, প্রতারণাসহ ব্যবসায়ী এবং সাধারণ মানুষকে নানাভাবে হয়রানি করছে বলে অভিযোগ রয়েছে চক্রটির বিরুদ্ধে। এছাড়া, চন্দ্রগঞ্জ থানায় বিভিন্ন চুরি-ছিনতাই, মাদক ব্যবসায়ী যেই গ্রেপ্তার হয়, তাকেই টাকার বিনিময়ে ছাড়িয়ে নিতে থানায় তদবির চালায় হাসান। সূত্রে জানা যায়, চন্দ্রগঞ্জ থানায় মোহাম্মদ হাসানের অনৈতিক তদবির বাণিজ্যে অতিষ্ঠ খোদ থানা পুলিশের বিভিন্ন অফিসাররা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন উপ-পরিদর্শক (এসআই) জানিয়েছেন, মাদক ব্যবসায়ী যেই আটক হয়, তাকেই নাকি হাসান তার আত্মীয় পরিচয় দিয়ে ছাড়িয়ে নিতে পুলিশকে চাপসৃষ্টি করে।
সম্প্রতি চন্দ্রগঞ্জ গণমিলনায়তনে আওয়ামীলীগের একটি সভায় জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি মিয়া মো. গোলাম ফারুক পিঙ্কু প্রধান অতিথি হিসেবে তাঁর বক্তৃতায় জামায়াত শিবিরের দুষ্টচক্র ও আওয়ামীলীগের দলীয় গ্রুপিংয়ের মূলহোতা রফিক ও হাসানকে যেখানে পাওয়া যাবে, সেখানেই গণধোলাই দিয়ে পানিতে ফেলে দেওয়ার নির্দেশ দেন।
জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি মিয়া মো. গোলাম ফারুক পিঙ্কু বলেন, আওয়ামীলীগের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বকে পুঁজি করে সামনে জাতীয় নির্বাচন কেন্দ্রীক এবং চন্দ্রগঞ্জে সরকার বিরোধী আন্দোলন জোরদার করতে চক্রটি রাজনৈতিক ফায়দা লুটে নেওয়ার চেষ্টা করছে।
চন্দ্রগঞ্জ থানা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি ও চন্দ্রগঞ্জ বাজার বণিক সমিতির সভাপতি এম ছাবির আহম্মেদ বলেন, নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধনহীন জামায়াতে ইসলামকে চন্দ্রগঞ্জে রাজনৈতিকভাবে শেল্টার দিচ্ছে চেয়ারম্যান নুরুল আমিন। বিষয়টি গোয়েন্দা সংস্থার নজরদারিসহ প্রশাসনের কঠোর হস্তক্ষেপ এবং আওয়ামীলীগের শীর্ষ নেতাদের ব্যবস্থা গ্রহণের দাবী জানিয়েছেন তিনি।