জেলার খবর, লক্ষ্মীপুর | তারিখঃ August 25th, 2022 | নিউজ টি পড়া হয়েছেঃ 7669 বার

লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি:
লক্ষ্মীপুরে জোরপূর্বক মুখ চেপে কীটনাশক খাইয়ে ও পরে মাথায় আঘাত করে শিল্পি আক্তারকে হত্যার দায়ে স্বামো মো. হোসেনের যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত। একইসঙ্গে ১০ হাজার টাকা জরিমানা ও অনাদায়ে আরও ১ বছরের কারাদণ্ডের আদেশ দেওয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২৫ আগস্ট) বেলা ১১ টার দিকে জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মোহাম্মদ রহিবুল ইসলাম এ রায় দেন।
লক্ষ্মীপুর জজ আদালতের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) জসিম উদ্দিন বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, আসামি হোসেন তার স্ত্রীকে পরিকল্পনা করে হত্যা করেছে। আদালতে ঘটনাটি প্রমাণিত হয়েছে। এতে আদালত তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ দেয়। আসামি পলাতক।
দণ্ডপ্রাপ্ত হোসেন সদর উপজেলার ভবানীগঞ্জ ইউনিয়িনের চরমনসা গ্রামের সফিক উল্যাহর ছেলে।
আদালত ও এজাহার সূত্র জানায়, হোসেনের সঙ্গে ২০০৩ সালের দিকে সদর উপজেলার মান্দারী ইউনিয়নে যাদৈয়া গ্রামের আব্দুল হাসেমের মেয়ে শিল্পির পারিবারিকভাবে বিয়ে হয়। তাদের সংসারব তিনজন মেয়ে ও একজন ছেলে সন্তান আছে। ২০১৬ সালের দিকে হোসেন দ্বিতীয় বিয়ে করে। দ্বিতীয় স্ত্রীকে নিয়ে হোসেন চট্টগ্রামে বসবাস করতো। এরপর থেকে তিনি প্রথম স্ত্রী সন্তানদের ভরণপোষণ বন্ধ করে দেয়। হোসেন প্রথম স্ত্রীকে পথের কাটা মনে করতো। এজন্য তিনি শিল্পিকে হত্যার পরিকল্পনা নিয়েই চট্টগ্রাম থেকে চরমনসা গ্রামের বাড়িতে আসেন।
২০১৮ সালের ২৭ আগস্ট সন্ধ্যায় পাশ্ববর্তী তোরাবগঞ্জ বাজার থেকে হোসেন কীটনাশক কেনে। পরে বাড়িতে গিয়ে কীটনাশক পানিতে মিশিয়ে স্যালাইন বলে শিল্পিকে খেতে বলে। পানি ঘোলা ও গন্ধ হওয়ায় শিল্পি তা খেতে চায়নি। এসময় তাদের মেয়ে সীমা আক্তার খেতে চাইলেও হোসেন তাকে খেতে দেয়নি। একপর্যায়ে হোসেন জোরপূর্বক মুখ চেপে শিল্পিকে বিষ খাইয়ে দেয়৷ পরে শিল্পি কয়েকবার বমি করে। এতে শিল্পিকে সুপারি খাওয়ানোর কথা বলে হোসেন ঘর থেকে বের হয়ে যায়।
এদিকে রাতে হঠাৎ হোসেন ও শিল্পির ঘুমানোর কক্ষ থেকে আওয়াজ আসে। একপর্যায়ে শিল্পির চিৎকার শোনা যায়। এসময় মেয়ে সীমা আক্তারসহ অন্যসন্তানরা উঠে আসলে হোসেন তাদেরকে ঘুমানোর জন্য ধমক দেয়। পরে হোসে তার মাথায় আঘাত করে। এতে কীটনাশকের প্রভাব ও আঘাত পেয়ে শিল্পির অবস্থার অবনতি হয়। ঘটনাটি অন্যদিকে প্রভাবিত করতে পাশ্ববর্তী এক গ্রাম্য চিকিৎসক এনে একটি স্যালাইন পুশ করা হয়েছিল। গ্রাম্য চিকিৎসক তখন শিল্পিকে দ্রুত হাসপাতাল নিয়ে যাওয়ার জন্য পরামর্শ দেয়। এতে সিএনজি চালিত অটোরিকশাযোগে হাসপাতাল নেওয়ার পথে শিল্পি মারা যায়। এ ঘটনার দুদিন পর আব্দুল হাসিম বাদী হয়ে হোসের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন।
ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনে ভিকটিমের পেটে বিষ ও মাথায় আঘাতের জখম পাওয়া গেছে। ময়নাতদন্তের ভিত্তিতে ২০১৯ সালের ২০ অক্টোবর মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও সদর মডেল থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মোসলেহ উদ্দিন আদালতে হোসেনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন৷ দীর্ঘ শুনানি ও সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে আদালত আসামির সাজা প্রদান করে।
Leave a Reply