লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি: মার্চ-এপ্রিল দুই মাস নিষেধাজ্ঞা শেষে শুক্রবার (৩০ এপ্রিল) মধ্যরাতে মেঘনা নদীতে নৌকা ভাসাবে লক্ষ্মীপুরের অর্ধ-লক্ষাধিক জেলে। গত কয়েকদিন টানা কাজ করে জাল নৌকা মেরামত শেষে সকল প্রস্তুতি নিয়ে ইলিশ শিকারে যাওয়ার অপেক্ষা করছে তারা। তবে মেঘনার পানিতে লবণাক্ততা বৃদ্ধি ও বৃষ্টি না হওয়ায় ইলিশ প্রাপ্তি নিয়ে জেলেরা শঙ্কায় রয়েছেন।

এদিকে লক্ষ্মীপুরের ৮৮ কিলোমিটার মেঘনা নদী এলাকায় প্রায় ৬০ হাজার জেলে রয়েছে। তবে সরকারিভাবে ৪৩ হাজার নিবন্ধিত জেলে রয়েছে। এ ৪৩ হাজার জেলের মধ্যে ৩০ হাজার জনের জন্য নিষেধাজ্ঞাকালীন সরকারিভাবে খাদ্য সহায়তার বরাদ্দ আসে। বাকি জেলেরা ধারদেনা করে সংসার চালাতে হয়। এতে অনেকেই ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও বাধ্য হয়ে নদীতে মাছ শিকারে যায়। নদীতে গিয়ে তাদেরকে ক্ষতিগ্রস্ত হতে হয়। জাল-নৌকা জব্দ ও জরিমানাসহ জেলও খাটতে হয় অসহায় জেলেদের।

কমলনগরের মতিরহাট ও লুধুয়া মাছঘাট এলাকার কয়েকজন জেলের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মেঘনার পানিতে লবণ বেড়ে গেছে। বৃষ্টিও নেই। দীর্ঘদিন পর তারা নৌকা ভাসাবে, কিন্ত ইলিশ পাওয়া নিয়ে আশঙ্কা রয়েছে। বৃষ্টি না হলে ইলিশ কম পাওয়া যায়। এরমধ্যে এখন নদীর পানিতে লবণাক্ততা নতুন সমস্যা। লক্ষ্মীপুরের জেলরা নিষেধাজ্ঞাকালীন নদীতে না নামলেও বাইরের নোয়াখালী ও ভোলার জেলেরা এসে ইলিশ শিকার করে বলে অভিযোগ রয়েছে।

সূত্র জানায়, ইলিশ উৎপাদন ও জাটকা সংরক্ষণে বছরের প্রায় ৩ মাস মেঘনায় ইলিশ শিকারে সরকারি নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। কিন্তু নিষেধাজ্ঞার পর গত দুই মৌসুমে লক্ষ্মীপুরের মেঘনা নদী এলাকায় আশানুরুপ ইলিশ পাওয়া যায়নি। জেলেদের দাবি মেঘনায় ইলিশ খুব কম আসে। তবে মৎস্য কর্মকর্তাদের দাবি, প্রায় ৯০ শতাংশ জেলে মাছ শিকারে বঙ্গপোসাগর ও সাগরের কাছাকাছি অবস্থান করে। এজন্য ইলিশ নদীতে আসার সুযোগ কম পায়। এছাড়া লক্ষ্মীপুরের মেঘনা নদীর বিভিন্ন স্থানে গভীরতা কম। ইলিশ গভীর জলের মাছ, এজন্য কম গভীর এলাকায় ইলিশ পাওয়া যায় না।

জানা গেছে, লক্ষ্মীপুরে ৪৩ হাজার জন নিবন্ধিত জেলে রয়েছে। এরমধ্যে ৩০ হাজার নিবন্ধিত জেলেকে নিষেধাজ্ঞার আগে ও পরবর্তীতে সরকারিভাবে ৪ মণ চাল দেওয়া হয়। ফেব্রুয়ারি ও মার্চ মাসের ২ মণ চাল নিবন্ধিত জেলেদেরকে দেওয়া হয়েছে। বাকি এপ্রিল-মে মাসের ২ মণ চাল ঈদের আগেই দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা।

জেলা মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্র জানায়, মার্চ-এপ্রিল দুই মাস লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার আলেকজান্ডার থেকে চাঁদপুরের ষাটনল পর্যন্ত একশ কিলোমিটার মেঘনা নদী এলাকায় সকল ধরণের মাছ শিকারে নিষেধাজ্ঞা জারি করে সরকার। ইলিশ উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে এ নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। আলেকজান্ডার থেকে হাইমচর সীমানা পর্যন্ত লক্ষ্মীপুরের মেঘনা নদীতে অবৈধভাবে মাছ শিকারে যাওয়ায় ১৩ জেলে বিভিন্ন মেয়াদে কারাগারে রয়েছে। গত দুই মাসে ইলিশ শিকারে যাওয়ায় ১৯ মামলা ও ১ লাখ ৪৮ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে। এসময় ৩ মেট্টিক টন জাটকা জব্দ করে স্থানীয় এতিমখানা, মাদ্রাসা ও অসহায়দের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে। জব্দকৃত ৭ লাখ মিটার জাল আগুনে পুড়ে ধ্বংস করা হয়।

রায়পুর উপজেলার উত্তর চরবংশী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল হোসেন বলেন, আমার ইউনিয়নে ৪ হাজার ৩০০ জন নিবন্ধিত জেলে রয়েছে। এরমেধ্য ২ হাজার ৭০৯ জনের নামে সরকারি চালের বরাদ্দ আসে। ফেব্রুয়ারি-মার্চ এ দুই মাসের চাল জেলেদেরকে দেওয়া হয়েছে।

লক্ষ্মীপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ বিল্লাল হোসেন বলেন, বৃষ্টি না হওয়ায় মেঘনার পানিতে লবণাক্ততা বেড়েছে। বৃষ্টি হলে তা কমে যাবে। এবার লক্ষ্মীপুরের মেঘনায় ২৫ হাজার মেট্টিক টন ইলিশ উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। মধ্যরাত থেকে মাছ শিকারে যাবে জেলেরা। তবে জুন পর্যন্ত জাটকা ধরা নিষিদ্ধ। জাটকা রক্ষায় মৎস্যবিভাগসহ সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের অভিযান অব্যাহত থাকবে।

সুত্র,,,মোহনা নিউজ